No products in the cart.
Paye Paye Panpatia -by Dr. Gautam Mistri
Roll over image to zoom in
₹140.00₹200.00 (-30%)
বেড়াতে যাওয়ার কথা মনে পড়লে সবার আগে আমাদের পাহাড়, সমুদ্র বা জঙ্গলের কথা মনে পড়ে। এই তিন ধরনের ভ্রমণের স্থানের মধ্যে বোধহয় ‘পাহাড়’ সারণির প্রথমে থাকবে। শহরের কলুষের বিস্বাদ বাদ দিয়ে পাহাড়ের অকৃত্রিম ছন্দের স্বাদ নেবার জন্য পদব্রজে পাহাড়ে ভ্রমণ বিকল্প নেই। পাহাড়ের ধুলোমাটি, বরফ সয়ে আর জনমানবহীন হিমালয়ের প্রত্যন্ত প্রদেশে, আধপেটা খেয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কিছু পাগলপানা মানুষ সর্বকালেই ঘরের নিশ্চিত আশ্রয় ত্যাগ করে অনিশ্চিতকে আলিঙ্গন করে নেয়। পানপাতিয়া অভিযান তেমনই এক অতি সাধারণ মানুষের স্বপ্নের সাধপুরনের আখ্যান।
একটি জনপ্রিয় পৌরাণিক লোকগাঁথা অনুযায়ী অতীতে কোন একসময়ে একজন পূজারী একই দিনে উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল হিমালয়ের দুইটি ‘ধাম’ বা প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র, বদ্রিনাথ ও কেদারনাথ ধামে সকাল-সন্ধ্যে একই দিনে পূজা করতেন। তখনের কথা তো দূরের কথা, এখনও এই দুই ধামে একই দিনে মোটর গাড়ি চেপে যাতায়াত অসম্ভব না হলেও কষ্টকর। জনমানসে এমন একটি ধারণা প্রচলিত ছিল, এই দুই ধামের মধ্যে কোন গিরিবর্ত্মের (পাস) পথে ঐ পূজারী যাতায়াত করতেন। আমরা সেই পৌরাণিক গল্পগাথায় বিশ্বাস করি কিনা সেটা অবান্তর।
সেই পৌরাণিক পথের সন্ধানে দেশ বিদেশের প্রথিতযশা পর্বতারোহীগণ (শিপটন, মার্টিন টিলম্যান, হরিশ কাপাডিয়া ও আরও অসংখ্য অভিযাত্রী) অনেক অভিযান চালিয়েছেন সেই ১৯৩৪ সাল থেকে। বদ্রিনাথ ও কেদারনাথ ধামের মধ্যে পড়ে আছে এক অতীব দুর্গম অঞ্চল, সেখানে প্রকৃতির হালচাল ক্ষণে ক্ষণে প্রতিকূল ও পরিবর্তনশীল — তারই মধ্য দিয়ে পার হয়ে যেতে হয় গোটা চারেক গিরিবর্ত্ম (মাউন্টেন পাস), বিপদসংকুল মৃত হিমবাহের গ্রাবরেখা (মৃত গ্লেসিয়ারের মোরেন), অতি উচ্চ তুষার ক্ষেত্র (আইস-ফিল্ড), দৃশ্যমান এবং লুক্কায়িত তুষার ফাটল (ক্রিভাস) ও সুবিশাল অনতিক্রম্য বেশ কয়েকটি হিমপ্রপাত (আইস-ফল্)। সেই কারণে সুদীর্ঘ বিগত ৭৫ বছর ধরে এই পথের সত্যতা অজানা থেকে গেছে। অবশেষে ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের এক বাঙ্গালি অভিযাত্রীদল একটি পথের সন্ধান খুঁজে পান ও বদ্রিনাথ থেকে পায়ে হেঁটে পানপাতিয়া হিমবাহ অতিক্রম করে মদমহেশ্বর পৌঁছান। দুর্গমতা, প্রাণের সংশয়কে আশঙ্কা না মেনে, বরং সেটাকে হাসিমুখে বরন করার জন্য, এই বিপদসংকুল পথে সাথী হবার জন্য মানুষের সংখ্যা নগণ্য।
লেখক তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে কেদারনাথ ধাম থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করে, দুর্গম পানপাতিয়া হিমবাহের পথে পানপাতিয়া হিমবাহের উপরে একনাগাড়ে দশ দিন চলে পৌঁছে গিয়েছিলেন মদমহেশ্বেরে। প্রাণের সংশয়, ক্লেশ অথবা অনিশ্চিতের সম্ভাবনা তাঁদের নিবৃত্ত করতে পারেনি।
এই বইয়ে তিনটি ভ্রমণ কাহিনী আছে — প্রথমটি লামখাগা গিরিবর্ত্ম অভিযান — সেখানে পানপাতিয়া অভিযানের স্বপ্ন দেখেছিলেন লেখক, দ্বিতীয়টি সিঙ্গালিলা পাসের পথে স্বনির্ভর অভিযান ( Alpine Trek), নিজেকে পরখ করার জন্য। সবশেষে আছে ক্লাইম্যাক্স হিসাবে দশজন অভিযাত্রীর দলপতি হিসাবে সবাইকে নিয়ে সফলভাবে কাঙ্ক্ষিত পানপাতিয়া হিমবাহের অভিযানের দিনলিপি।
About : Dr. Gautam Mistri
লেখক পেশায় হৃদরোগের চিকিৎসক। অভিযানের নেশা লেখককে আচ্ছন্ন করেছিল তাঁর তরুণ বয়সে, ছাত্রাবস্থায়। পেশার দায়বদ্ধতা ও নিজের ও পরিবারের অন্নবস্ত্রের সংস্থানের কর্মকাণ্ডের মধ্য থেকে সময় চুরি করে তাঁর শখ পূরণ চলতে থাকে। সেটাই সম্ভবত তাঁকে বেঁচে থাকার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রেরণা যোগায়। বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ ও কর্মজীবনের মাঝখানে আজ থেকে তিরিশ বছর আগে সুযোগ বুঝে দার্জিলিঙের পর্বতারোহণ সংস্থা থেকে পাহাড়ে অভিযানের প্রথাগত প্রশিক্ষণ (বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স) সেরে, সম্মানজনক ‘এ’ গ্রেড নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে পেশার সাথে সাথে চলতে থাকে তাঁর গহীন হিমালয়ে অভিযানের দিবাস্বপ্ন। সবকটা স্বপ্ন সত্যি হয়ে ওঠেনা। সে কয়টি যৎকিঞ্চিত স্বপ্ন সত্যি হয় তার মধ্যে পানপাতিয়া অভিযান উল্লেখযোগ্য।
যৌবন যখন অস্তাচলে, জীবনের জীবনী শক্তি তখন প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই অস্তমিত। ষাট ছোঁয়া বয়সে পানপাতিয়া অভিযান লেখকের অনুভবে তাঁকে আবার তাঁর তারুণ্য ফিরিয়ে দেয়। লেখকের বয়সের চেয়ে অর্ধেক বয়সের তরুন-তরুনীদের সাথে পথ চলার সময়, গহীন হিমালয়ের দুর্গম সেই গিরিপথে আর বিশাল তুষার ক্ষেত্রের মাঝের ক্ষুদ্র তাঁবুতে লেখক নতুন করে আবিষ্কার করেন নিজেকেই। এই আবিষ্কার তাঁর একান্ত প্রাপ্তি — জাগতিক অর্থমূল্যে তার লেনদেন চলেনা। সেই অনুভবের কথা তিনি তাঁর নিজের বাচনভঙ্গিতেই ব্যক্ত করেছেন।
No more offers for this product!